ঢাকা, বুধবার   ১৫ মে ২০২৪

করোনা মোকাবেলায় সফল দেশগুলো 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৩২, ১৭ নভেম্বর ২০২০

অনির্দিষ্টকাল কঠোর লকডাউন দিয়েও করোনায় নাকাল হয়েছে বিশ্ব। অধিকাংশ দেশই এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। অথচ ভিন্ন ব্যবস্থাতেই সফলভাবে করোনাকে রুখে দেয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বেশ কিছু দেশ।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই দেশগুলোর সাফল্যের নিয়ামক ছিল আইসোলেশন কোয়ারেন্টিন আর স্বাস্থ্যবিধি। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে সুইডেন।

সুইডেন
ইউরোপের একমাত্র দেশ হলো সুইডেন। যারা পুরো করোনা প্যান্ডেমিকে একবারের জন্যেও লকডাউন আরোপ করেনি। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা ছিল অফিস-আদালত, দোকান-পাট, হোটেল-রেস্তোরাঁ সবই।

শুধু তাই নয়, ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্যে স্কুল যাওয়া ছিল বাধ্যতামূলক। কিছুটা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল বটে, তবে তা কেবল ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোতেই। আর সেটাও পরিস্থিতি বিবেচনায়। যেমন- রেস্তোরাঁ বা বারে ভিড় কমানোর জন্যে টেক অ্যাওয়ে সার্ভিসে জোর দেয়া, বয়স্কদের খুব দরকার ছাড়া বাইরে বেরোনো নিরুৎসাহিত করা, ওল্ড হোমে দর্শনার্থী নিষিদ্ধকরণ, অসুস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সবেতন ছুটি দেয়া ইত্যাদি।

প্রথম প্রথম এ ভাবে সবকিছু উন্মুক্ত রাখা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ সমালোচনা হলেও সুইডেনই শেষমেশ করোনা জয়ীর আসনে। আজ এতদিনেও সুইডেনে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার ইউরোপের অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশ নয়। বরং ব্যবসা-বাণিজ্য চলমান থাকায় সুইডেনের অর্থনীতি রয়েছে আগের মতোই চাঙ্গা। অর্থাৎ, লকডাউন ছাড়াই দেশটি করোনা মোকাবেলায় সফলতা পেয়েছে। আর এ সফলতার জন্য যতটুকু সতর্কতা অবলম্বন না করলেই নয় কেবল ততটুকু আরোপ করেছে তারা।

ভিয়েতনাম
দেশটি চীনের সীমান্তবর্তী শুধুমাত্র এ-কারণটিই যাদের করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলার জন্যে যথেষ্ট ছিল। উপরন্তু যাদের চিকিৎসাব্যবস্থাও খুব বেশি অগ্রসর নয়। সেই দেশটিই কোভিড-১৯ মোকাবেলায় দেখিয়েছে অসামান্য সাফল্য।

করোনা সংক্রমণকে সফলভাবে রুখে দেয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রশংসাও কুড়িয়েছে দেশটি।

এ-বছরের ২৩ জানুয়ারি দেশটিতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। প্রায় দশ কোটি মানুষের দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা খুবই কম।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভিয়েতনামের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে দ্রুত ও সুপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা। জানুয়ারি মাসের শুরুতে, যখন দেশটিতে একজনও কোভিড-১৯ আক্রান্ত শনাক্ত হয়নি, তখনই ভিয়েতনাম সরকার ‘কঠোর পদক্ষেপ’ নেয়।

প্রাথমিক অবস্থাতেই কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং অর্থাৎ আক্রান্তের সংস্পর্শে আসাদের খুঁজে বের করার ব্যাপারে দেশটি ছিল খুবই তৎপর। সম্ভাব্য করোনারোগী শনাক্তের পর বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়।

তাইওয়ান 
করোনা-প্রাদুর্ভাবের শুরুতে জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় তাইওয়ান সম্পর্কে বলেছিল- চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকার কারণে দেশটি চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

এককালে চীনের অংশ তাইওয়ানের খাদ্যাভ্যাস সহ অনেক কিছুতেই চীনের সাথে সাদৃশ্য, উহানের সাথে সরাসরি ফ্লাইট- এসব কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরাও বলেছিল যে, তাইওয়ানে করোনা পরিস্থিতি বেশ ভয়াবহ হতে যাচ্ছে।

১৭ নভেম্বর পর্যন্ত দেশটিতে ৬০৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। আর মারা গেছে মাত্র ৭ জন। (ওয়ার্ল্ডোমিটার)

স্ট্যানফোর্ড হেলথ পলিসির বিশ্লেষণ বলছে, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েই তাইওয়ান এই সাফল্যের মুখ দেখতে পেয়েছে। এক্ষেত্রে তারা ২০০৩ সালে সার্স প্রাদুর্ভাব ঠেকিয়ে দেয়ার অভিজ্ঞতাকেই কাজে লাগিয়েছে সফলভাবে।

গুজব প্রতিহতেও সফল তারা। চীনে করোনা ছড়ানোর পরপরই অনলাইন এবং সোশ্যাল মিডিয়া গুজব ছড়ায় যে, দক্ষিণ তাইওয়ানে ট্রাকবোঝাই করে লাশ চুল্লিতে নিয়ে গিয়ে পোড়ানো হচ্ছে।

এই গুজবের বিপরীতে দেশটির ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ আর সেই সাথে করোনাভাইরাস কীভাবে ছড়ায়, সংক্রমণ ঠেকানোর উপায় কী- এগুলো প্রচার করতে থাকে। ফলে মানুষ আতঙ্কিত না হয়ে আশ্বস্ত হয় এবং সময়মতো বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেয়।

কোয়ারেন্টিনকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছিল তাইওয়ান। বিদেশফেরতদের হোম কোয়ারেন্টিন ছিল বাধ্যতামূলক। প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর তারা বাসায় আছেন কিনা- এটা নিশ্চিত করা হয়েছে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে।

কোয়ারেন্টিন অমান্যের জন্যে রাখা হয় কঠোর জরিমানার ব্যবস্থাও। এরই অংশ হিসেবে এক তাইওয়ানিজ দম্পতিকে দশ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা করা হয়, যা তিরিশ লক্ষ তাইওয়ানি ডলার সমমূল্যের। এরপরে আর কেউ কোয়ারেন্টিন ছেড়ে বাইরে যায় নি।

জাপান
সাড়ে বারো কোটি জনসংখ্যার এই দেশ বয়স্ক মানুষের হারে পৃথিবীতে ১ নম্বর। আর এর শহরগুলো মানুষের ভিড়ে ঠাসা। অর্থাৎ কোভিডের ঝুঁকি বাড়াতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা যেসব কারণের কথা বলেন তার অনেকগুলোই প্রযোজ্য দেশটির ক্ষেত্রে।

কিন্তু সমস্ত আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে তারা করোনা প্রাদুর্ভাব সীমিত করে ফেলেছে কার্যত কোনো লকডাউন ছাড়াই। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১৮ হাজার ১৩৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ৮৮৫ জন। (ওয়ার্ল্ডোমিটার)

বিশ্লেষণ থেকে উঠে আসা বিষয়গুলোর মধ্যে প্রথমেই আসে জাপানিদের নিয়ম মানার সংস্কৃতি। জাপানীরা ১৯১৯-এ ফ্লু মহামারির সময় থেকে মাস্ক ব্যবহারে অভ্যস্ত। গত ১০০ বছরেও তারা এই অভ্যাস ছাড়েনি। ঘরে থাকুন, দোকানপাট বন্ধ রাখুন- কঠোর আইন নয়, করোনালগ্নে জনগণের প্রতি সরকারের এগুলো ছিল অনুরোধ।

কিন্তু শাস্তি বা জরিমানার বিধান না থাকা সত্ত্বেও কেবল নিয়ম মানার প্রবণতা থেকে সরকারের দেয়া প্রতিটি পরামর্শ জাপানিরা পালন করেছে আন্তরিকভাবে। তাদের তরফে এই সহযোগিতা দেশটির সরকারকে করোনার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করেছে ব্যাপকভাবে।

স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণেও জাপানিরা সবসময়ই তৎপর। মেডিটেশন ও ইয়োগা চর্চা, অর্গানিক খাবার খাওয়া, ফাস্টফুড কম খাওয়া- এই অভ্যাসগুলোর জন্যে তাদের খ্যাতি আছে। হৃদরোগ এবং স্থূলতা প্রতিরোধের পাশাপাশি ইমিউন সিস্টেমকেও চাঙ্গা রাখে এই অভ্যাসগুলো।

কেরালা 
করোনাকে সফলভাবে রুখে দেয়ায় কেবল ভারতই নয়, পুরো বিশ্বের জন্যে মডেল ‘কেরালা’। অথচ ভারতের প্রথম করোনারোগী শনাক্ত হয় এই কেরালাতেই।

রাজ্যটি ঘনবসতিপূর্ণ। বয়স্কদের সংখ্যা সেখানে বেশি। চীনে প্রচুর ছাত্রছাত্রী ছিল তাদের, যাদের তারা সেখানে করোনা প্রাদুর্ভাব ঘটার পরপরই ফিরিয়ে আনে। আর বছরে প্রায় দশ লাখ পর্যটক আসে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমের এই রাজ্যে। অর্থাৎ, করোনায় অত্যধিক সংক্রমণের সব বড় শর্তই ছিল কেরালার।

কিন্তু যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল বাস্তবে মোটেই তা হয়নি।

বহু দেশের বহু আগে করোনা নিয়ে কেরালায় সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। আর ‘কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং’ জোরদার করতে সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম চালু করে। অর্থাৎ, একদম গোড়া থেকেই কেরালা প্রশাসন করোনা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করে।

তবে তাদের প্রস্তুতি আর দশটা রাষ্ট্রের মতো লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব কিংবা অসহিষ্ণুতামূলক ছিল না। সামাজিক দূরত্ব কথাটাকেই এড়িয়ে যায় তারা। তাদের অনুসৃত পন্থা হলো- শারীরিক দূরত্ব, কিন্তু সামাজিক সংহতি।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকেও তাদের মনোযোগ ছিল প্রথম থেকেই। প্রতিটা বাসস্ট্যান্ডে সাবান আর পানির ব্যবস্থা করা, যাতে সবাই হাত ধুতে পারে।

লাক্ষাদ্বীপ
গোটা ভারতে যখন করোনারোগীর সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে, সেখানে দেশটির অংশ হওয়া সত্ত্বেও লাক্ষাদ্বীপে সংক্রমণের ঘটনা নেই বললেই চলে। তাই প্রশাসন এবং শিক্ষক-অভিভাবকদের সভায় সিদ্ধান্তক্রমে সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়।

দৈনন্দিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নির্মাণ শিল্প বা মাছ ধরতে যাওয়া- এগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেয়া হয়।

৩৬টি দ্বীপকে নিয়ে গঠিত আরব সাগরের এই দ্বীপপুঞ্জটির এই সাফল্যের প্রধান নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে ব্যতিক্রমী এবং সফল কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থাকে। অন্যান্য দেশ যেখানে অধিবাসীদের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করেছে নিজ গৃহ, ক্যাম্প বা হাসপাতালে, সেখানে লাক্ষাদ্বীপে দুটো কোয়ারেন্টিন সেন্টার চালু করা হয়েছে নিজ দ্বীপের বাইরে, কোচিতে।

যাদের জরুরি চিকিৎসা বা বিশেষ প্রয়োজনে মূল ভূখন্ডে যেতে হয়েছে তারা কোচিতে সাতদিন কোয়ারেন্টিনে থেকে টেস্টে নেগেটিভ হলে তবেই ফেরত আসার অনুমতি পেয়েছেন। আর বাইরের দেশ থেকে লাক্ষাদ্বীপের যে স্থানীয়রা ফিরে এসেছেন তাদেরও কোচিতে দুসপ্তাহ ও দ্বীপে ফিরে আরও দুসপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

তুরস্ক
দেশটিতে ১১ মার্চ প্রথম করোনারোগী শনাক্ত হয়। এরপর বেশ দ্রুত সর্বত্র সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি চীন ও ব্রিটেনের তুলনায় সংক্রমণের গতি বেশি ছিল সেখানে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছিল, দেশটিতে মৃতের সংখ্যা অনেক বাড়বে। তাদের অবস্থা ইতালির মতো হয়ে উঠতে পারে- এমন আশংকাও ছিল। কিন্তু তেমনটি হয় নি। সাড়ে আট কোটি মানুষের দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা ইতালির চেয়ে অনেক কম। অর্থাৎ, দেশটি করোনার উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে সক্ষম হয়েছে। আর সেটাও পুরোপুরি লকডাউন ছাড়াই।

এ-ক্ষেত্রে তারা বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং-এর দিকে। দেশটিতে এ-কাজে ৬ হাজারটি টিম মার্চ মাস থেকে কাজ করছে। এ-কাজে হামে আক্রান্তদের খুঁজে বের করার কয়েক দশকের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগায় তারা। সেই সাথে ছিল কার্যকর কোয়ারেন্টিন এবং আইসোলেশন ব্যবস্থাপনাও।

দক্ষিণ কোরিয়া
প্রাদুর্ভাবের গোড়ার দিকে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম হটস্পট ছিল দক্ষিণ কোরিয়া। জানুয়ারিতে প্রথম রোগী শনাক্তের এক মাসের মধ্যে তীব্র গতিতে সংক্রমণ ছড়িয়েও পরে। কিন্তু এরপরই দেশটি সংক্রমণ রুখতে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

আক্রান্ত শহরগুলোতে গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়। মনোযোগ দেয়া হয় আক্রান্তদের আইসোলেশন, কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং এবং কোয়ারেন্টিনের উপর। তবে দেশটি কিন্তু পুরোপুরি লকডাউনে যায়নি কখনোই।

শারীরিক দুরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ, অফিসের কাজ, গির্জায় প্রার্থনা, স্টেডিয়ামে বেসবল ম্যাচ, শিক্ষার্থীদের এক্সাম, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান- সবই চলেছে সেখানে।

কিউবা
লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশে যখন করোনা তাণ্ডব চালাচ্ছে, সেখানে কিউবায় ভাইরাসটি মোটেও সুবিধা করতে পারেনি। দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন খুবই কম সংখ্যক মানুষ। 

এরই মধ্যে সচল হয়েছে দেশটির আন্তঃপ্রদেশীয় যোগাযোগ। দেশি পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে হোটেলগুলো। ১ জুলাই থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় চালু হয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যটনও।

বিশ্লেষকদের মতে, মূলত কড়া কোয়ারেন্টিনের মাধ্যমেই মহামারির রাশ টেনে ধরেছে কিউবা।

নতুন কোনও করোনারোগী শনাক্তের সঙ্গে সঙ্গেই সেখানকার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং-এর কাজটি করেছে জোরেশোরে। কাউকে সন্দেহভাজন মনে হলেই তাকে কোয়ারেন্টিন সেন্টারে পাঠানো হয়। হোম কোয়ারেন্টিনে যাদের রাখা হয় তাদের অবস্থান দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হয় প্রতিবেশীদের।

তবে এসবের চেয়েও যে বিষয়টির কারণে দেশটি বিশ্ববাসীর মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে তা হলো তাদের বিশ্বজনীন মমতা। যখন করোনা আতঙ্কে তথাকথিত সভ্য রাষ্ট্রগুলো কেবল নিজেদের নিয়েই ব্যতিব্যস্ত ছিল, তখন কিউবা দেখিয়েছে কীভাবে চরম সঙ্কটেও মমতার দৃষ্টান্ত গড়া যায়।

করোনা মোকাবেলায় সহায়তার জন্যে ইতালি, মেক্সিকো, স্পেন, আর্জেন্টিনাসহ অন্তত ২৮টি দুর্গত দেশে তিন সহস্রাধিক মেডিকেল টিম পাঠিয়েছে তারা।

ব্রিটিশ ক্রুজ শিপ এমএস ব্রেইমারে ৫০ জন যাত্রী করোনায় আক্রান্ত হলে যুক্তরাষ্ট্রসহ কোনো দেশই যখন জাহাজটিকে তাদের বন্দরে ভিড়তে দিচ্ছিল না তখন এই কিউবা-ই তাদের বন্দর খুলে দেয় এবং যাত্রীদের নিজ নিজ দেশে ফেরার ব্যবস্থা করে।

অপরের প্রতি মমত্ববোধ শুধু একজন করোনারোগীকে নয়, আপনাকেও সুস্থ রাখবে, ভালো রাখবে- কিউবা সেটিই দেখিয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশ
কোভিড-১৯ এ মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। করোনা সংক্রমণ যখন দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছিল তখন এমনটাই বলা হয়েছিল। এমন অপপ্রচারও চালানো হয়েছিল- এ দেশে মৃত্যু এত বেশি হবে যে পথে ঘাটে লাশ পড়ে থাকবে।

অথচ এখানে করোনায় মৃতের সংখ্যা মাত্র ৬ হাজার ২১৫ জন। সাড়ে ষোল কোটি মানুষের দেশে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৪৭২ জন।

যদিও ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশের বেশিরভাগ মানুষ করোনার সাথে মানিয়ে চলার দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে স্বাভাবিক জীবন শুরু করেছিল প্রায় প্রথম থেকেই। আসলে জন্মগতভাবেই এদেশের মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাইরের দেশগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। আবহাওয়া, খাবার, নানা রোগ বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে এখানে ইমিউন সিস্টেমকে সবসময়ই সক্রিয় থাকতে হয়।

আর এই অঞ্চলের মানুষের দেহে ACE-2 এনজাইমের পরিমাণ কম থাকায় ভাইরাসটি আক্রমণের সুযোগও পাচ্ছে কম। ফলে মিউটেশনের মাধ্যমে শক্তিশালী হওয়ার পরিবর্তে শক্তি হারিয়ে নিষ্ক্রিয় হচ্ছে এই ভাইরাস।

তাছাড়া, জাতিগতভাবে আমাদের দুর্যোগ-মহামারি মোকাবেলার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাও অনেক বেশি ইউরোপ আমেরিকানদের চেয়ে। বেশি সমমর্মিতা ও আত্মিক শক্তিও।

যে-কারণে করোনা সেখানে যতটা তাণ্ডব চালাতে পেরেছে বাংলাদেশে পারেনি তার লেশমাত্র।
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি